সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

বিয়ের স্বপ্ন রোহিঙ্গা কিশোরী সানজিদা ও রাফিয়ার

বিয়ের স্বপ্ন রোহিঙ্গা কিশোরী সানজিদা ও রাফিয়ার

স্বদেশ ডেস্ক: ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার বুচিদং ফিয়াজি পাড়া থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন সানজিদা (১৪) ও তারই চাচাত বোন রফিকা (১৩) । তারা এগারো বারো বছর বয়সে দেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম ভয়াবহতা। বালুখালী ময়নাঘোনা ১১-নং ক্যাম্পে কিশোরী সানজিদা ও রফিকার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

সানজিদা অকপটেই জানালেন, সেখানকার করুন কাহিনী। তার গ্রামে বৃদ্ধা ও তরুণীদের পৃথক লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। সেখানে তরুণী যুবতীদের আলাদা একটি বাড়িতে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা গণধর্ষণ করেছে। তার বড় বোনও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তার সামনেই তিন তরুণীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়। সেই মর্মান্তিক স্মৃতি এখনো ভুলতে পারছি না। দুটি বছর পার হতে চলেছে, আগস্ট মাস আমাদের জীবনের এক কলঙ্কময় অধ্যায়।

সানজিদার বুক ফাটা আর্তনাদই বলে দেয় কি অবর্ণনীয় দুর্দশায় আছেন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা কিশোরী সানজিদা।

এখানে ক্যাম্পে কেমন আছেন, আর স্বপ্ন কী জানতে চাইলে মৃদু হেসে জবাব দেন, এখন একটিই স্বপ্ন বিবাহ। পৃথিবী আমাদের মতো রোহিঙ্গা কিশোরীদের কাছে অন্ধকারময়। তিনি কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রিয় মাতৃভূমি মিয়ানমারে শিশুকাল কেটেছে। বয়স সন্ধিকালে কিশোরী বয়সে অজানার পথে আমাদের ভবিষ্যত। তাই সুখ-দুখ শেয়ার করার মতো জীবন সঙ্গিকে বেছে নিতে বিয়ের বিকল্প নেই। ক্যাম্পে আমার বয়সী অনেকেই সন্তানের মা হয়েছেন। অল্প বয়সটা আমাদের জন্যে কোনো ফ্যাক্ট না। মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য নির্মমতার শিকার হয়ে সানজিদা এখন ময়নাঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

তেরো বছরের রফিকা বলেন, বাবাকে গুলি করে মেরেছে বার্মিজ সেনারা। মাকে নিয়ে বাংলাদেশে ক্যাম্পে আশ্রয় পেলেও মা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন সব সময়। মা ছাড়া আমার পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই। জীবন কখনো আর আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। আমার পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয় ২০১৭ সালের ২৯ শে আগস্ট। মগ সেনাবাহিনী এসেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই হামলা থেকে কোনোমতে আমি আর আমার মা পালাতে পেরেছি।

সেই সময় কিন্তু সীমান্ত পৌঁছা ছিল খুব কঠিন। আর এখন জীবন বাঁচাতে ভাল মনের একজন সাথী প্রয়োজন। ক্যাম্পে বন্দি জীবনে সাথী ছাড়া নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়। মাকে টেনশন মুক্ত করতে আমি জীবন সাথী হিসেবে একজনকে পছন্দ করি। সে আমাদের গ্রামের ছেলে। ময়নাঘোনা ক্যাম্পেই আছে। আমাদের খোঁজ খবর রাখেন। দু-এক মাস পরেই তার সাথে আমার বিয়ে হবে। বিয়ে মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী এক ভালবাসার বন্ধন। আমাদের ক্যাম্প জীবনে শত কষ্টের মাঝেও একটু সুখের আশা করতেই পারি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877